ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটর নিজে নিজে শিখে গ্রাফিক্সের কাজ করলে শুরুর দিকে কয়েকটা খুব কমন সমস্যায় পড়েন অনেকেই। যেমন ফেসবুক কভার বা পোস্ট আপলোড করলেই ফেটে যায়, পর্দায় রং একরকম দেখালেও প্রিন্ট করার পর আসে আরেক রকম- ইত্যাদি। এই জাতীয় সকল রোগের মহৌষধ হচ্ছে সঠিকভাবে ডকুমেন্ট সেট আপ করা।
আরেকটু খুলে বলি ব্যাপারটা, গ্রাফিক ডিজাইন মূলত দুই ধরণের মিডিয়ার জন্য হয়, এক হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়া আর দুই- ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। পত্রিকা, লিফলেট, প্যাকেজিং, পোস্টার, বিজনেস কার্ড- এক কথায় যেসব ডিজাইন প্রিন্ট করতে হবে, সেগুলোর জন্য সেটিংস্ এক রকম, আর ফেসবুক বা ওয়েব, অ্যাপ, গেম- অর্থাৎ যেসব জিনিস আমরা ফোন, কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদি প্রযুক্তিপণ্যের পর্দায় দেখি, সেগুলোর সেটিংস আবার আরেক রকম।
ফেসবুকে তো লক্ষ লক্ষ পেইজ, কতশত কভার ফটো আপলোড হচ্ছে প্রতিদিন। এতো ফটো রাখতে গেলে তো প্রচুর জায়গা দরকার! এজন্য ফেসবুক করে কি, সব ইমেজের সাইজ কমিয়ে দেয়, তাই ছবির মানও যায় কমে। এজন্য ছবির রেজুলেশন অনেকে বাড়িয়ে দেন, কিন্তু তবুও ছবি ফেটে যেতে পারে। ফেসবুক কভারের সাইজ এখন ৩১৫ পিক্সেল বাই ৮৫১ পিক্সেল, তবে দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত ঠিক রেখে সাইজটা দ্বিগুণ করে নিলে, অর্থাৎ ৬৩০ পিক্সেল বাই ১৭০২ পিক্সেল মাপে ডিজাইন করলে ভালো। প্রিন্ট মিডিয়া আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্ট্যান্ডার্ড সেটিংস ঠিকমত রাখলে ইমেজ ফেটে যাওয়া, কালার উল্টোপাল্টা আসা- এসব সমস্যা হবে না।
প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য-
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সাধারণত প্রচলিত একক, যেমন- ইঞ্চিতে মাপা হয়।
রেজুলেশন ৩০০ রাখতে হয়, যেন প্রিন্ট শার্প আসে।
কালার মোড সি এম ওয়াই কে (সায়ান-ম্যাজেন্টা-ইয়েলো-কি ব্ল্যাক) রাখতে হয়, কারণ প্রিন্টারে এই চারটা কালার দিয়েই সব কালার তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, সিএমওয়াইকে কালার মোডে সাধারণ কালো রং এর কোড হচ্ছে সি ০, এম ০, ওয়াই ০, কে ১০০। এই কোডের কালো রং প্রিন্টে উজ্জ্বল আসে না বলে রিচ ব্ল্যাক কালারটা ব্যবহার করা হয় (সি ১০০, এম ১০০, ওয়াই ১০০, কে ১০০) যা প্রিন্টে একদম আইফোনের জেট ব্ল্যাক কালারের মত কালো আসে!
আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য সেটিংস হচ্ছে-
মাপজোক সব পিক্সেলে, কারণ স্ক্রিনের মাপ পিক্সেলের হিসেবেই হয়।
রেজুলেশন ওয়েবের জন্য ৭২, ফেসবুক বা অন্য ওয়েব সাইটগুলোর জন্য ইমেজের কোয়ালিটি ঠিক রাখা আর সাইজ কম রাখা দুটোই জরুরি, তাই ৭২ কেই অপটিমাম ধরে কাজ করা হয়।
এক্ষেত্রে কালার মোড আর জি বি (রেড গ্রিন ব্লু),কারণ স্ক্রিন থেকে এই তিন রঙের আলোর কম্বিনেশনেই সব রং দেখানো হয়।
কালার মোড ভুল হলেই প্রিন্টে অন্যরকম কালার চলে আসে। আরজিবি আর সিএমওয়াইকে কালার মোডের সম্পর্ক বা সাদৃশ্য নিয়ে কাজ করে প্যানটোন। আরজিবির একটা রঙের কাছাকাছি সিএমওয়াইকের একটা রং খুঁজে পেতে হলে (প্যানটোন সাজেস্টেড ম্যাচ) প্যানটোনের তালিকার সাহায্য নেওয়া যায়।
অনিন্দ্য আহমেদ
প্রাক্তন প্রশিক্ষক, গ্রাফিক ডিজাইন
ঢাকা জেলা, বাংলাদেশ
Leave a Reply